ইস্যু-১

জীবনে অনেক কিছু চিন্তা করেছি, কিন্তু কখনো যে ব্লগ লিখবো তা চিন্তা করি নাই। আমি বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলাম, আর এখন ভবঘুরে। বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রদের মাথায় আর যাই আসুক না কেনো লেখা লিখি করার চিন্তা তারা করে না। কিন্তু কেন জানি আমার মনে হলো যে লেখা উচিত, আমার কিছু লেখা উচিত। নিজের জন্য না হলেও আমাদের যুবসমাজের জন্য ত কিছু লেখা উচিত। আসলে ভাই এইখানে যাই বয়ান আমি দেই না কেনো সবটাই নিজের স্বার্থেই দিবো।
কারন এইখানে লেখা টা পড়ে যদি কেউ বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয় সেইটাও আমার কাজে দেবে, আর আপনারা ত জানেন ই আপনারা যত পড়বেন আমাকে গুগল কোম্পানি সেই হিসাবেই কিছু সম্মানি দেবে। 

আসলে যে বিষয় নিয়া কথা বলতে চাচ্ছি, তাতে অপনাদের পড়ার কোনো ইচ্ছা হবে কিনা জানি না। কিন্তু লিখতে আমাকে হবেই। তাই আউল ফাউল না বইল্যা আসল কথায় আসি।

কথাটা হচ্ছে আমাদের দেশের যুবসমাজরা এখন খুবি আধুনিক। সবাই ইন্টারনেট নামক বিষয়টাকে খুব ভালোভাবেই চেনে। আর যারা ইন্টারনেট চেনে সবাই মনে হয় স্যোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট এ যুক্ত। আমাদের দেশে স্যোশ্যাল মিডিয়া ব্যাবহারকারী মানুষের সংখ্যা ২৬ মিলিয়ন(ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত)। খুব বড় অংক তাই না? আচ্ছা আমরা স্যোশাল মিডিয়া কেনো ব্যাবহার করি? আমাদের আত্নীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব এবং চেনা জানা সবার সাথে যোগাযোগ করার জন্য, তাদের সাথে নিজেদের হাসি কান্না শেয়ার করার জন্য এবং যাবতীয় কাজ যা সবাই করে। 

কিন্তু কথা হচ্ছে গিয়া, আমরা কেনো ব্যাবহার করি স্যোশ্যাল মিডিয়া? এর উত্তর একটাই আর তা হলো ,ইস্যু বানানোর জন্য। আমাদের বিশেষ করে এই ২৬ মিলিয়ন স্যোশ্যাল মিডিয়া ইউজার দের অন্তত ২০ মিলিয়নের কাজ হলো ইস্যু বানানো। রোহিংগা নির্যাতন-ইস্যু, মিস বাংলাদেশ-ইস্যু, ব্লু হোয়েল-ইস্যু, তিন টাকার ডিম-ইস্যু(পরবর্তি ইস্যু কি নিয়া হবে তা পরে জানাবো)। আমাদের ইস্যু তো প্রতি সপ্তাহে পরিবর্তন হয়(না হইলেও আমরা সেইটারেও ইস্যু বানাই)। শেষ এই ইস্যু গুলার কথা আমার মনে আছে। আর যে সব ইস্যু গেছে সেগুলার নাম লিখতে গেলে গুগল আমাকে লাথি মাইর‍্যা বের কইরা দিয়ে বলবে , যা তোর আর ব্লগ লেখা লাগব না তুই গিয়া নোবেল লেখ। 

আসলে তাই, আমাদের দেশে স্যোশ্যাল মিডিয়া তে যত ইস্যু হইছে তা নিয়া আরামছে নোবেল লেখা যায়।  আর ভালোভাবে লেখা হইলে সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার টাও হয়ত আপনি পেয়ে যাইতে পারেন( আইডিয়া দিচ্ছি বলে আমাকে ফেলে রেখে  যেনো নোবেল নিতে যাইয়েন না)।
মাঝে মাঝে তো অবাক হয়ে যাই এত ইস্যু আসে কই থেইক্যা? আপনি যদি কোনোভাবে বাংলাদেশের কোনো ইস্যুতে ইস্যু হয়ে যান তাইলে আপনি সেলিব্রিটি(১০০% গ্যারান্টি দিলাম, বিফলে আমি আমার ফেসবুক পেজ বন্ধ কইরা দিমু)। 


আসেন এইবার মন্ত্র পড়া বাদ দিয়া আসল কথা বলি, আমারে একটু বুঝাইয়া কন তো এই যে এত ইস্যু বানাইয়া আপনারা দেশের কি বালের উপকার করছেন? আচ্ছা থাক বাদ দেন দেশের কথা, দেশ চালানোর জন্য তো সরকার আছে, আপনারা নিজেরা কি বালের লাভ করছেন? 

খুব খারাপ কথা বলে ফেলছি , মাফ করবেন। কিন্তু আমাকে বলেন কি লাভ নিজেদের অথবা নিজের? আমরা নিজেরা নিজেদের মূল্যবান সময় নষ্ট করে ইস্যু নিয়া স্যোশ্যাল মিডিয়াতে ঝড় তুলছি। এমনকি রোহিংগা সমস্যা নিয়ে তো মাঝে ফেসবুকের অর্ধেক ব্যাবহারকারী মায়ানমারের সাথে মনে হয় যুদ্ধ জয় করে এখন বাড়িতে ঘুমাচ্ছে। 
আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলেন , এই যে রোহিংগা ইস্যু নিয়া এত মাতাইলেন, এত লাফাইলেন, কতজন গেছিলেন এই রোহিংগা শরণার্থীদের পাশে? কতজন তাদের কাছ থেকে তাদের কষ্টের কথা শুনছেন? সব তো নিউজ মিডিয়ার নিউজ দেখে আর মানুষের মুখে শুনে স্যোশ্যাল মিডিয়াতে যুদ্ধ ঘোষনা করেন।
তাছাড়া ধরেন মিস বাংলাদেশ এর কথা, নিজের চেহারা কি তার ঠিক নাই আর আমরা আন্যের দাতের ফাকে ইলুমিনাটি খুজি। আমরা কার দোষ কার গুন না বুঝে ইস্যু বানাই।
আরে ভাই আমি তো ব্লু হোয়েল এর কথা ভুলেই গেছিলাম। কোথায় ব্লু হোয়েল আত্মঘাতী গেম আমরা তাকেই ইস্যু বানাই। ইস্যু বানাইয়া মানুষকে সচেতন করতে গিয়া মানুষকে আরো আগ্রহী করি।আচ্ছা আপনারা বলেন বাংলাদেশের কত জন মানুষ ব্লু হোয়েল সম্পর্কে জানত? আর এই স্যোশ্যাল মিডিয়ার ইস্যু হউয়ার পর কত জন জানছে? আমরা ব্লু হোয়েল নিয়া এত টাই আগ্রহী হয়ছি যে, গুগলে ব্লু হোয়েল সার্চ দিয়া আমরা তিন নম্বার দেশ হয়ে গেছি ব্লু হোয়েল টপিক এ। আহ কত উন্নতি তাই না? আমি জানি না ব্লু হোয়েল এর সার্ভার এখনো সক্রিয় কিনা। কিন্তু যদি সক্রিয় থাকে তাহলে আশা করি ২ মাস পরে বাংলাদেশের জনসংখ্যা কিছু কমবে। কারন যারা যানত না গেম টা সম্পর্কে তারাও আপনাদের ইস্যুর মাধ্যমে জেনে গেছে।



খুব উপকার করছেন দেশের তাইনা। ''ইস্যু বানাচ্ছি আর বানবো, স্যোশ্যাল মিডিয়াতে ঝড় তুলবো" এইটা আমাদের প্রতিপাদ্য হউয়া উচিত। কারন আমদের কাজ ই ত একটাই হয়ে গেছে। ইস্যু বানানো।


আমরা ইস্যু বানাতে বানাতে ভুলে যাচ্ছি আমাদের অবস্থা কি? এমনকি আমাদের দেশের অবস্থা কি সেইটাও ভুলে যাচ্ছি। দেশে কোনো জরুরী পরিস্থিতি হলে সেইটাও আমরা ইস্যু বানাইয়া স্যোশ্যাল মিডিয়াতে ঝড় তুলে মনে করি সমস্ত সমস্যার সমাধান করে ফেলছি। আদেও কি কোনো সমস্যার সমাধান হয়? না। হয় না।


To be continued...........



Comments

Post a Comment